,

এভাবে আর চলবে কতকাল…?

প্রায় বছর খানেক পূর্বে নিউইয়র্কের সীমান্তবর্তী অঙ্গরাজ্য নিউজার্সিতে রাত প্রায় ১০ ঘটিকায় আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা খুবই কম ছিলো। এক লেনের টু ওয়ে রোডে (সম্ভবত এটি ছিলো কেনেডি ব্লুবার্ড) একটি কালো রংয়ের কার খুবই স্লো চালাচ্ছিলো। স্লো মানে গতি ঘন্টায় ২০ এর বেশী ছিলোনা। আমি প্রায় ২/৩ মিনিট ঐ গাড়ির পিছনে চালিয়ে খুব বিরক্ত লাগছিলো গতি কম থাকায়। শেষ মেশ স্লো গতির গাড়িটাকে ওভারটেক করে একটু দ্রুত যাওয়া শুরু করলাম। ওভারটেক করতে গিয়ে হলুদ রংয়ের দুই দাগ আমাকে ক্রস করতে হয়েছিলো। ওই গাড়ি ব্যতিত রাস্তায় কোন গাড়ি আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু মুহুর্তেই মনে হলো গায়েব থেকে পুলিশের একটি গাড়ি পিছন থেকে এসে আমাকে দাড়াতে বললো। আমি ঠিক দাড়ালামও। কোন কথা না বলে পুলিশ আমার কাছ থেকে আমার লাইসেন্স এবং গাড়ির বৈধ কাগজ পত্র নিলো। আমি ভাবলাম হয়তো আমাকে টিকেট দিবে, টিকেট মানে জরিমানা করবে, কিন্তু লাইসেন্স টা হাতে নিয়ে পুলিশ বললো
গৎ ঈযড়ফিযঁৎু উড় ুড়ঁ ধিহঃ ংঃধু রহ অসবৎরপধ ড়ৎ  ুড়ঁ ধিহঃ মড় নধপশ? ওভ ুড়ঁ ধিহঃ ংঃধু রহ অসবৎরপধ ুড়ঁ সঁংঃ যধাব ঃড় ভড়ষষড়ি ঃযব ৎঁষবং. উড়হ’ঃ ফড় রঃ ধমধরহ.  আমার অপরাধ ছিলো একটাই হলুদ রংয়ের দাগটি ক্রস করা। কথাগুলো বলছি এ কারনেই হলুদ রংয়ের দাগ ক্রস করায় যদি আমাকে আমেরিকা থেকে বের করে দিতে চায়, সে জায়গায় মানুষ তো অনেক দুরের কথা একটা কুকুর কে চাপা দিলে আমার কি পরিনতি হতো একবার চিন্তা করেন…?? আমার পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত। ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় নায়ক সালমান খান, যাকে ঘিরে হাজার হাজার কোটি রুপির বাণিজ্য। তার সাথে দেশের সকল নামী দামি ও ক্ষমতাধর মানুষের রয়েছে গভীর সখ্যতা। সেই সালমান খান কে হরিন মারার অপরাধে জেল খাটতে হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটছে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এআরসি) গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার লোক নিহত ও ৩৫ হাজার আহত হন। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে মৃত্যুর হার ৮৫ দশমিক ৬। বেসরকারি এক হিসাব বলছে, এ বছরের প্রথম সাত মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্রমতে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১২ দেশের মধ্যে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বাংলাদেশে নিহতের হার সর্বোচ্চ। এ সংখ্যা ১৬৯ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় যে কেবল একটি প্রাণের মৃত্যু হচ্ছে তা নয়, এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ শতাংশ। এ ছাড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় মোট মৃতের শতকরা ৬০ ভাগ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। দুর্ঘটনায় যিনি মারা যাচ্ছেন তার সঙ্গে তার পুরো পরিবারেও নেমে আসছে অনিশ্চয়তা, কালো মেঘ তাদের জীবন করে দিচ্ছে অন্ধকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঈদের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। এবারের ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জন মারা যান। আর এর আগে ঈদুল ফিতরের সময় মারা যান ৯৬ জন। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর অদক্ষ চালকের কারণে ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজার ১৩৭ জন দুর্ঘটনাস্থলেই মারা যান। কিন্তু প্রশ্ন হলো এত মানুষ মারার পরও চালকের কি শাস্তি হচ্ছে, এমপি পুত্র শাবাবের গাড়ী চাপায় সেলিম ব্যাপারী মারা যাওয়ার বিষয়টি ২০ লক্ষ টাকায় সমঝোতা হয়েছে। এমপি পুত্রের গাড়ী চাপা বলে ২০ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২০ হাজার টাকার সমঝোতার সংবাদ ও আমরা পাই। আমার প্রশ্ন হলো এমপি পুত্র শাবাব যে আবারো অন্য কাউকে গাড়ী চাপা দিবে না এ নিশ্চয়তাটা কি কেউ আমাকে দিতে পারবেন। শুধু শাবাবই নয়, বলছি যারাই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মেরে রেহাই পেয়ে যান। তারা যে পুনরায় আবারো বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে মানুষ মারবেন না তার নিশ্চয়তা কে দিবে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলছেন, মহাসড়কের চার শতাংশ এলাকায় শতকরা ৩৫ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। আর দুর্ঘটনার কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা। তার মানে দাড়ালো স্বাধীনতার ৪৭ বছরে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩২৯ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা যদি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী খরচ করতেন তাহলে হয়তো আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও এর সুফল পাওয়া যেত। আল্লাহ ভাল জানেন এ ভাবে আর চলবে কতকাল। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমরা চাইনা সড়ক দুর্ঘটনায় আর কোন মা’য়ের বুক খালি হোক। আমরা চাই না সড়ক দুর্ঘটনায় আর কোন পরিবার নি:শ্বেস হয়ে যাক।

 

লেখক- ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী নয়ন (সাংবাদিক)
নিউইয়র্ক


     এই বিভাগের আরো খবর